শনিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৫

গণিত সম্পর্কে কিছু কথা।

গণিত ( ইংরেজি : Mathematics) পরিমাণ , সংগঠন , পরিবর্তন ও স্থান বিষয়ক গবেষণা। গণিতে সংখ্যা ও অন্যান্য পরিমাপযোগ্য রাশিসমূহের মধ্যকার সম্পর্ক বর্ণনা করা হয়। গণিতবিদগন বিশৃঙ্খল ও অসমাধানযুক্ত সমস্যাকে শৃঙ্খলভাবে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া খুজে বেড়ান ও তা সমাধানে নতুন ধারনা প্রধান করে থাকেন। গাণিতিক প্রমাণের মাধ্যমে উক্ত ধারনাগুলো সত্যতা যাচাইকরন করা হয়ে থাকে। গাণিতিক সমস্যা সমাধান সম্পর্কিত গবেষণায় বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ বা শত শত বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।



গণিতের সার্বজনীন ভাষা ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা একে অপরের সাথে ধারণার আদান-প্রদান করেন। গণিত তাই বিজ্ঞানের ভাষা।

১৭শ শতক পর্যন্তও কেবল পাটীগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতিকে গাণিতিক শাস্ত্র হিসেবে গণ্য করা হত। সেসময় গণিত দর্শন ও বিজ্ঞানের চেয়ে কোন পৃথক শাস্ত্র ছিল না। গাণিতিক শাস্ত্রগুলির গোড়াপত্তন করেন প্রাচীন গ্রিকেরা, মুসলিম পণ্ডিতেরা এগুলি সংরক্ষণ করেন, এবং খ্রিস্টান পুরোহিতেরা মধ্যযুগে এগুলি ধরে রা খেন। ১৭শ শতকে এসে আইজাক নিউটন ও গটফ্রিড লাইবনিৎসের ক্যালকুলাস উদ্ভাবন এবং ১৮শ শতকে অগুস্তঁ লুই কোশি ও তাঁর সমসাময়িক গণিতবিদদের উদ্ভাবিত কঠোর গাণিতিক বিশ্লেষণ পদ্ধতিগুলির উদ্ভাবন গণিতকে একটি একক, স্বকীয় শাস্ত্রে পরিণত করে। তবে ১৯শ শতক পর্যন্তও কেবল পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিদ ও প্রকৌশলীরাই গণিত ব্যবহার করতেন।

১৯শ শতকের শুরুতে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের যে আধুনিক ধারা সূচিত হয়, সে-সংক্রান্ত গবেষণাগুলির ফলাফল প্রকাশের জন্য জটিল গাণিতিক মডেল উদ্ভাবন করা হয়। বিশুদ্ধ গণিতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণায় জোয়ার আসে। অন্যদিকে ২০শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কম্পিউটারের আবিষ্কার এ-সংক্রান্ত সাংখ্যিক পদ্ধতিগুলির গবেষণা বৃদ্ধি করে।

গণিতের ইতিহাস
ইতিহাস ও গণিতবিশ্

গণনা করা ছিল আদিমতম গাণিতিক কর্মকাণ্ড। আদিম মানুষেরা পশু ও বাণিজ্যের হিসাব রাখতে গণনা করত। আদিম সংখ্যা ব্যবস্থাগুলি প্রায় নিশ্চিতভাবেই ছিল এক বা দুই হাতের আঙুল ব্যবহার করে সৃষ্ট। বর্তমানের ৫ ও ১০-ভিত্তিক সংখ্যা ব্যবস্থার বিস্তার এরই সাক্ষ্য দেয়। মানুষ যখন সংখ্যাগুলিকে বাস্তব বস্তু থেকে পৃথক ধারণা হিসেবে গণ্য করা শিখল এবং যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ --- এই চারটি মৌলিক অপারেশন বা প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করল, তখনই পাটীগণিতের যাত্রা শুরু হল। আর জ্যামিতির শুরু হয়েছিল রেখা ও বৃত্তের মত সরল ধারণাগুলি দিয়ে। গণিতের পরবর্তী উন্নতির জন্য চলে যেতে হবে খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে, যখন ব্যাবিলনীয় ও মিশরীয় সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল।

প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার ব্যাবিলনীয়রা এবং নীল নদের অববাহিকায় প্রাচীন মিশরীয়রা সুশৃঙ্খল গণিতের প্রাচীনতম নিদর্শন রেখে গেছে। তাদের গণিতে পাটীগণিতের প্রাধান্য ছিল। জ্যামিতিতে পরিমাপ ও গণনাকে প্রাধান্য দেয়া হয়, স্বতঃসিদ্ধ বা প্রমাণের কোন নিদর্শন এগুলিতে পাওয়া যায় না।

প্রাচীন ব্যাবিলনীয়দের গণিত

ব্যাবিলনিয়ার গণিত সম্পর্কে আমরা জানতে পারি এই সভ্যতার নিদর্শনবাহী কাদামাটির চাঙড় থেকে, যেগুলির উপর ব্যাবিলনীয়রা কীলক আকৃতির খোদাই করে করে লিখত। এই লেখাগুলিকে কিউনিফর্ম বলা হয়। সবচেয়ে প্রাচীন চাঙড়গুলি খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ সালের বলে ধারণা করা হয়। খোদাইগুলির বেশির ভাগ গণিতই ছিল বাণিজ্য বিষয়ক। ব্যাবিলনীয়রা অর্থ ও পণ্যদ্রব্য আদানপ্রদানের জন্য পাটীগণিত ও সরল বীজগণিত ব্যবহার করত। তারা সরল ও যৌগিক সুদ গণনা করতে পারত, কর গণনা করতে পারত, এবং রাষ্ট্র, ধর্মালয় ও জনগণের মধ্যে সম্পদ কীভাবে বন্টিত হবে তা হিসাব করতে পারত। খাল কাটা, শস্যাগার নির্মাণ ও অন্যান্য সরকারি কাজকর্মের জন্য পাটীগণিত ও জ্যামিতির ব্যবহার হত। শস্য বপন ও ধর্মীয় ঘটনাবলির জন্য পঞ্জিকা নির্ধারণেও গণিতের ব্যবহার ছিল।

ব্যাবিলনীয় সংখ্যা

বৃত্তকে ৩৬০টি ভাগে বা ডিগ্রীতে বিভক্ত করা এবং প্রতি ডিগ্রী ও মিনিটকে আরও ৬০টি ভাগে বিভক্ত করার রীতি ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান থেকে এসেছে। ব্যাবিলনীয়রাই একেক দিনকে ২৪ ঘণ্টায়, প্রতি ঘন্টাকে ৬০ মিনিট ও প্রতি মিনিটকে ৬০ সেকেন্ডে ভাগ করে। তাদের সংখ্যা ব্যবস্থা ছিল ৬০-ভিত্তিক। ১- কে একটি কীলকাকৃতি খাঁজ দিয়ে নির্দেশ করা হত এবং এটি বারবার লিখে ৯ পর্যন্ত নির্দেশ করা হত। ১১ থেকে ৫৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলি ১ এবং ১০-এর জন্য ব্যবহৃত চিহ্ন ব্যবহার করে নির্দেশ করা হত। ৬০-এর চেয়ে বড় সংখ্যার জন্য ব্যাবিলনীয়রা একটি স্থাননির্দেশক চিহ্ন ব্যবহার করত। স্থানিক মানের এই ধারণার উদ্ভাবন গণনাকে অনেক এগিয়ে দেয়। এর ফলে একই প্রতীক বিভিন্ন স্থানে বসিয়ে একাধিক মান নির্দেশ করা সম্ভব হয়। ব্যাবলিনীয়দের সংখ্যা ব্যবস্থায় ভগ্নাংশও নির্দেশ করা যেত। তবে তাদের ব্যবস্থায় শূন্য ছিল না, এবং এর ফলে দ্ব্যর্থতার সৃষ্টি হয়। ব্যাবিলনীয়রা বিপরীত সংখ্যা, বর্গ সংখ্যা, বর্গমূল, ঘন সংখ্যা ও ঘনমূল, এবং যৌগিক সুদের সারণী প্রস্তুত করেছিল। তারা ২-এর বর্গমূলের একটি ভাল আসন্ন মান নির্ধারণ করতে পেরেছিল। কিউনিফর্ম চাঙড়গুলি থেকে আরও প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ব্যাবিলনীয়রা দ্ব িঘাত সমীকরণের সমাধানের সূত্র আবিষ্কার করেছিল এবং তারা দশটি অজানা রাশি বিশ িষ্ট দশটি সমীকরণের ব্যবস্থা সমাধান করতে পারত। খিস্টপূর্ব ৭০০ অব্দে এসে ব্যাবিলনীয়রা গণিত ব্যবহার করে চাঁদ ও গ্রহসমূহের গতি নিয়ে গবেষণা আরম্ভ করে। এর ফলে তারা গ্রহগুলির দৈনিক অবস্থান পূর্বাভাসে সক্ষম হয়, যা জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষশাস্ত্র --- দুই ক্ষেত্রেই তাদের কাজে আসে।
জ্যামিতিতে ব্যাবিলনীয়রা সদৃশ ত্রিভুজের একই বাহুগুলির মধ্যে সমানুপাতিকতার সম্পর্কের ব্যাপারে অবহিত ছিল। তারা পীথাগোরাসের উপপাদ্য ব্যবহার করে সমস্যা সমাধান করতে পারত এবং অর্ধবৃত্তের উপর অঙ্কিত কোণ যে সমকোণ হয়, তা জানত। তারা সরল সমতলীয় বিভিন্ন চিত্র যেমন সুষম বহুভুজ, ইত্যাদির ক্ষেত্রফলের সূত্র এবং সরল ঘনবস্তুগুলির আয়তনের সূত্র বের করেছিল। তারা পাই-এর জন্য ৩- কে আসন্ন মান হিসেবে ব্যবহার করত।

প্রাচীন মিশরীয়দের গণিত

মিশরীয়রা তাদের স্তম্ভগুলিতে হায়ারোগ্লিফের মাধ্যমে সংখ্যা অঙ্কিত করেছিল, কিন্তু মিশরীয় গণিতের আসল নিদর্শন হল আনুমানিক ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দুইটি প্যাপিরাস। এগুলিতে পাটীগণিত ও জ্যামিতির নানা সমস্যা আছে, যার মধ্যে বাস্তব সমস্যা যেমন নির্দিষ্ট পরিমাণ মদ তৈরির জন্য কতটুকু শস্য লাগবে, এক জাতের শস্য ব্যবহার করে মদের যে মান পাওয়া যায়, অন্য জাতের শস্য কতটুকু কাজে লাগিয়ে সেই একই মান পাওয়া যায়, তার সমস্যা। মিশরীয় বেতন নির্ণয়ে, শস্যক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ও শস্যাগারের আয়তন নির্ণয়ে, কর নির্ণয়ে ও নির্দিষ্ট কাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় ইটের সংখ্যা বের করতে গণিতকে কাজে লাগাত। এছাড়াও পঞ্জিকা গণনাতেও তারা গণিতভিত্তিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ব্যবহার করত। পঞ্জিকার সাহায্যে তারা ধর্মীয় ছুটির তারিখ ও নীল নদের বার্ষিক প্লাবনের সময় নির্দেশ করতে পারত। মিশরীয়দের সংখ্যা ব্যবস্থা ছিল ১০- ভিত্তিক। তারা ১০-এর বিভিন্ন ঘাতের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হায়ারোগ্লিফ প্রতীক ব্যবহার করত। তারা ১-এর প্রতীক পাঁচবার লিখে ৫, ১০-এর প্রতীক ৬ বার লিখে ৬০, আর ১০০-র প্রতীক ৩ বার লিখে ৩০০ নির্দেশ করত। একসাথে এই প্রতীকগুলি ৩৬৫ নির্দেশ করত।

গণিতের মৌলিক ধারণাসমূহ

অঙ্ক

গণিতে অঙ্ক বা অংক হলো সংখ্যা প্রকাশক চিহ্ন। কোনো সংখ্যায় একটি অঙ্কের দুধরণের মান থাকে, নিজস্ব মান ও স্থানীয় মান। দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে ০ থেকে শুরু করে ৯ পর্যন্ত দশটি অঙ্ক আছে। এছাড়াও রয়েছে আরো নানা ধরনের সংখ্যা পদ্ধতি যেমনঃ বাইনারি( দুই ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি), অক্টাল ( আট ভিত্তিক), হেক্সাডেসিমাল ( ষোলো ভিত্তিক)। তবে দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিই বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় সংখ্যা পদ্ধতি ।

বি:দ্র: কোনো ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। সংশোধন করে দেওয়া হবে। এবং গনিত বিষয়ক যেকোন প্রশ্ন বা পরামর্শ কমেন্ট বক্স অথবা ইমেইলের মাধ্যমে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব। সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। গনিতের সাথেই থাকুন।

লগের ভিত্তি বা বেইজ কেন শূন্য হতে পারে না?

আমরা প্রায় সবাই-ই জানি যে, লগের ভিত্তি বা বেইজ কখনো শূন্য হতে পারে না। এবং লগের ভিত্তি যদি শূন্য নেয়া হয়, তাহলে সেই লগের কোন ফলাফল আসে না বা অসঙ্গায়িত ফলাফল। কিন্তু কেন? লগের ভিত্তি শূন্য হলে এমন কি সমস্যা-ই বা হত? এবং, লগের ভিত্তি এবং লগে দেয়া সংখ্যা উভয়েই শূন্য হলে কি হত? “লগের ভিত্তি কেন শূন্য হতে পারে না?”- বুঝতে হলে, প্রথমেই বুঝতে হবে লগ এবং লগের বেইজ বা লগের ভিত্তি সম্বন্ধে। “মজার গণিত”-এর বিগত গণিত পোস্টে লগ(log) এবং লন(ln) নিয়ে বিস্তারিত লেখা হয়েছিল। তাই, প্রথমত লগ সম্বন্ধে খুব ভালো ধারণা থাকতে হবে। সেজন্য এই লেখাটি প্রথমে পড়ে আসুনঃ-

লগ(LOG) এবং লন(LN) কি? এবার শুরু করা যাকঃ

যারা লগ সম্বন্ধে মোটামুটি ভালো জানেন, তারা জানেন যে, “কোন লগারিদম বা লগের অংকে একটি সংখ্যা দেয়া হয়। লগের কাজ হল সেই সংখ্যাকে লগের বেইজের ‘power’ বা ‘to the power’ বা ‘ঘাত’ হিসেবে প্রকাশ করা। যা হচ্ছে ঐ লগের ফলাফল। অর্থাৎ, লগের ফলাফল হচ্ছে বেইজ এর ‘power’ বা ‘to the power’ বা ‘ঘাত’”- এই কথাটার মানে অবশ্যই ভালোমত বুঝতে হবে। তা না হলে, সামনের কোন কিছুই বুঝা যাবে না। এই কথাটা না বুঝলে উপরে দেয়া লিঙ্ক হতে “লগ(log) এবং লন(ln) কি? ” পড়ে আসুন।

কোন লগের ভিত্তি শূন্য বলতে কি বুঝায়?

কোন লগের ভিত্তি শূন্য মানে, ঐ লগে যদি কোন সংখ্যা দেয়া হয়, তবে লগ সেই সংখ্যাটিকে শূন্যের "power" বা "to the power" বা "ঘাত" হিসেবে প্রকাশ করার চেষ্টা করবে। এবং বেইজের "power" বা "to the power" বা "ঘাত" যা আসবে, তা হবে ঐ লগের ফলাফল। এবার একটু চিন্তা করুন ... শূন্যের "power" বা "to the power" বা "ঘাত" যা-ই হোক না কেন, ফলাফল তো সর্বদা একই আসবে। শূন্যের "power" বা "to the power" বা "ঘাত" বলতে আসলে কিছু নেই। কারণ, শূন্যের উপর "power" বা "to the power" বা "ঘাত" হিসেবে যত বড় বা যত ছোট সংখ্যাই দেয়া হোক না কেন, ফলাফল সর্বদা শূন্যই আসবে। *(শূন্যের পাওয়ার যদি শূন্য হয়, তবে তা কিন্তু অনির্ণেয়)* এখন যদি আমরা কোন লগের ভিত্তি শূন্য দেই এবং লগে input হিসেবে যদি দেই ১০, তাহলে এর মানে আমরা লগকে বলছি, “এই লগ! ১০ সংখ্যাটিকে শূন্যের ‘power’ বা ‘to the power’ বা ‘ঘাত’ হিসেবে তৈরি করে দাও তো!”- কি সাংঘাতিক! ১০ কে শূন্যের "power" বা "to the power" বা "ঘাত" হিসেবে তৈরি করতে হবে! এটা কি কখনো সম্ভব? না, কখনোই সম্ভব না। কারণ, শূন্যের উপর "power" বা "to the power" বা "ঘাত" দিলে সর্বদা শূন্যই পাওয়া সম্ভব। শূন্য ব্যতিত অন্য কোন সংখ্যা পাওয়া সম্ভব না। তাই, লগের বেইজ বা ভিত্তি শূন্য দিয়ে কোন সংখ্যা input দেয়া হলে, লগ সেই সংখ্যাকে শূন্যের "power" বা "to the power" বা "ঘাত" হিসেবে প্রকাশ করতে পারে না। ফলে, এর কোন ফলাফল পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, এর কোন মান নেই বা গাণিতিক ভাষায় “অসঙ্গায়িত”!

লগের ভিত্তি এবং লগে দেয়া সংখ্যা উভয়েই যদি শূন্য হয়?

“লগের ভিত্তি শূন্য হলে, সেই মান অসঙ্গায়িত”- এটা তো আমরা জানলাম। কিন্তু, লগের ভিত্তি এবং লগের input এ দেয়া সংখ্যা উভয়েই শূন্য হলে কি হবে? এক্ষেত্রে ফলাফল “অসঙ্গায়িত” এবং “অনির্ণেয়”! কিভাবে? সেটাই তো এখন দেখার বিষয়! লগের ভিত্তি শূন্য বসানোর মানে, আমরা এমন একটি লগের মেশিন তৈরি করেছি, যেখানে লগের input এ কোন সংখ্যা দেয়া হলে সেই সংখ্যাকে আমাদের লগের মেশিন শূন্যের "power" বা "to the power" বা "ঘাত" হিসেবে প্রকাশ করে দেখাবে। আমরা একটু আগে জানলাম, কোন সংখ্যার-ই এক্ষেত্রে লগের মান পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু, শূন্যের পাওয়ার যেকোনো কিছু হলে তো ফলাফল শূন্য। তার মানে, লগের বেইজ এবং input এ দেয়া সংখ্যা যদি শূন্য হয়, তাহলে কিছু একটা হওয়া সম্ভব! কিন্তু, কি হবে? সেক্ষেত্রে আসলে লগের ফলাফল অনেক! কারণ, লগের ভিত্তি এবং input উভয় স্থানেই শূন্য দিয়ে লগকে আমরা বলছি, “এই লগ! ০ সংখ্যাটিকে শূন্যের ‘power’ বা ‘to the power’ বা ‘ঘাত’ হিসেবে তৈরি করে দাও তো!” এখন, শূন্যের উপর পাওয়ার হিসেবে যেকোনো কিছু বসালে ফলাফল সর্বদা শূন্য। তাই, এই অংকের ফলাফল রয়েছে অসীম সংখ্যক! কেননা, ০ এর উপর ১ বসালেও ০, ০ এর উপর ২ বসালেও ০, ০ এর উপর ৩ বসালেও ০, ০ এর উপর ৪ বসালেও ০, ০ এর উপর ৫ বসালেও ০, ০ এর উপর ৬ বসালেও ০, ০ এর উপর ৭ বসালেও ০, ............... এভাবে অনন্তকাল চলতে থাকবে। তাই, নির্দিষ্ট করে কোন ফলাফল বলা সম্ভব নয়। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে তা “অসঙ্গায়িত” এবং “অনির্ণেয়”!

নোটঃ আমার আজকের এই লেখা পড়ে যদি অন্তত একজন-ও "লগের ভিত্তি বা বেইজ কেন শূন্য হতে পারে না?" বুঝতে পারে, তাহলে আমার আজকের লেখা সার্থক। যদি কারো কোন জায়গায় বুঝতে অসুবিধা হয়, অথবা যদি কোন প্রশ্ন বা প্রতিক্রিয়া থাকে, তবে নিচে মন্তব্য করে জানাতে পারেন। সবার জীবন হোক গণিতময় :)>

সোমবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৫

১=২ (এক সমান দুই) !!!!!

ধরি,
x = y [যেখানে, x ও y উভয়ই পূর্ণ সংখ্যা]
বা, xy = y² [উভয় পক্ষকে y দ্বারা গুণ করে]
বা, xy-x² = y²-x² [উভয় পক্ষ হতে x² বিয়োগ করে]
বা, x²-xy = x²-y² [উভয় পক্ষকে (-) দ্বারা গুণ করে]
বা, x (x-y) = (x+y) (x-y)
বা, x = x+y
বা, x = x+x [যেহেতু, আমরা ধরেছিলাম, x=y]
বা, x = 2x
বা, 1 = 2

অতএব, 1=2



নোটঃ আমরা সবাই ১=২ এর প্রমাণটা দেখলাম/ শিখলাম। কিন্তু, ১=২ কি আসলেই সম্ভব? না, ১=২ কখনই সম্ভব নয়। তাহলে একটু আগে আমরা যেই প্রমাণটি করলাম, সেটি কি ভুল? হ্যাঁ, অবশ্যই ভুল। প্রমাণটির একটি লাইনে ভুল রয়েছে। সেই লাইন কোনটি? আপনারা এই প্রমাণের ভুল খুঁজে বের করুন। কারণ, গণিতের ভুল বের করার মজাই আলাদা। যে ভুল ধরতে পারবেন, সে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে ভুলটি ধরিয়ে দিন। ১ম ১০ জন ভুল ধরতে সক্ষম না হলে, তারপর আমি আপনাদেরকে ভুলটি দেখিয়ে দিব। তাই, ভুল না ধরতে পারলেও, কমেন্ট করে আমাকে জানান।

১ = -১ (এক সমান মাইনাস এক)!!!

প্রমাণঃ

-1 = -1
বা,-1/1=-1/1
বা,-1/1=1/-1
বা, √(-1/1) = √(1/-1) [উভয় পক্ষে বর্গমূল করে]
বা,√-1/√1=√1/√-1
বা,(√-1)²=(√1)² [আড়াআড়ি গুণ করে]
বা,i²=1 [যেহেতু, √(-1)=i]
বা,-1 = 1 [যেহেতু, i² = -1]
অতএব, ১ = -১


নোটঃ ১ = -১ কখনোই সম্ভব নয়। তাই, অবশ্যই এই প্রমানে কোন ভুল রয়েছে। তাহলে, ভুলটি কথায়? আপনারা খুঁজে বের করুন। কারণ, গণিতের ভুল ধরার মজাই আলাদা। আর এই মজা শুধুমাত্র একজন গণিতপ্রেমিই উপলব্ধি করতে পারবেন। তাই, আজকের এই প্রমাণের ভুল খোঁজার চেষ্টা করুন এবং নিচে মন্তব্য করুন ↓ ↓ ↓